মায়া
মায়া গল্প ১ম পর্ব5 (2)
মায়া গল্প ১ম পর্ব
#মায়া
#১ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
আমার স্বামী নাঈমকে আমি স্পষ্ট দেখেছি আমার ছোট বোন পৃথুর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায়। আমি আমার শাশুড়ির সাথে হসপিটালে গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাতে। আমার পেটে নাঈমের আট মাসের সন্তান। ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করালেন। তারপর হাসিমুখে বললেন, আপনি ছেলে সন্তানের মা হবেন।
শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলাম আমি। আমার শাশুড়ির গলায় পরা তখন সোনার একটা চেইন ছিল। এই খুশির সংবাদ শুনে চেম্বারেই তিনি আমার গলায় পড়িয়ে দিলেন সেই চেইন। খুশিতে তখন আমার চোখে জল এসে গেল।আর আমি তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ আমি নাঈমকে চমকে দিবো।বাড়ি ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরে বলবো,’নাঈম, তুমি ছেলে সন্তানের পিতা হতে যাচ্ছো।’
কিন্তু কী দূর্ভাগ্য আমার!কে জানতো ঘরে ফিরে আমি দেখবো আমার আপন ছোট বোনের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে আছে নাঈম!
‘
আমার নিজের প্রতি খুব ঘৃণা হচ্ছে।পৃথু আমার আপন বোন হয়ে কী করে এমন করতে পারলো?
আর নাঈম!
গতকাল রাত যখন দুজন একসাথে শুয়েছি তখনও তো নাঈম আমার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো,’নোহা, তুমি জানো আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি?’
আমি বললাম,’কতটা?’
সে বললো,’যার বেশি আর ভালোবাসা যায় না।’
আমি তখন নাঈমকে শক্ত করে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরলাম।
নাঈম তখন আমার থেকে দূরে সরে গিয়ে বললো,’এ কি করছো, এভাবে আর শক্ত করে কখনো ধরো না!’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’কেন?’
ও বললো,’আমাদের বাবুটা ব্যাথা পাবে তাই!’
ওর কথা শুনে লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে গেল। আমি তখন নাঈমের আরো কাছাকাছি হলাম।তার একটা হাত শক্ত করে ধরে বললাম,’নাঈম,আমি যদি মরে যায় তবে কী তোমার কষ্ট হবে?’
নাঈম আমার মুখ চেপে ধরে রেগে গিয়ে বললো,’আরেকবার যদি তুমি এমন কথা বলো তবে তুমি নিজেই আমার মরা মুখ দেখবে!’
ওর কথা শুনে আমার বুকটা কেমন কেঁপে উঠলো মুহুর্তে। আমি বললাম,’না না।আর কখনো এমন কথা বলবো না।আমরা দুজন চিরদিন বেঁচে থাকবো।’
তারপর নাঈম আমাকে তার আরো কাছে টেনে নিলো।আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,’তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই আমি, তুমি ঘুমাও কেমন!’
তখন আমার দু চোখ জলে ভরে উঠেছিল।মনে মনে বলেছিলাম, আমার কী ভাগ্য!নাহলে মা মরা এক দূর্ভাগা মেয়ে কী আর এমন বর পায়!
‘
আমি হঠাৎ ঘরে ঢুকে যেতেই ওরা অপ্রস্তুত হয়ে বিছানায় উঠে বসলো।পৃথু তাড়াহুড়ো করে বিছানায় পড়ে থাকা কাপড় নিয়ে তার গায়ে জড়িয়ে নিলো।আর নাঈম কাঁথাটা টেনে নিলো তার শরীরের উপর।
আমি দেখেও না দেখার ভান করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। তারপর ওখানে কল ছেড়ে দিয়ে প্রাণ ভরে কেঁদে নিলাম। কাঁদতে কাঁদতে আমার বার বার শুধু একথাই মনে হচ্ছিল,ওরা কী করে এমন করতে পারলো?
আমি ইচ্ছে করলেই ঘরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারতাম।পৃথুর গায়ে হাত তুলতে পারতাম। কিন্তু এসব করিনি কারণ ঘরের অন্য লোকেরা শুনবে। আমার শাশুড়ি কিংবা ঘরের একটা কাজের ছেলে মেয়ে যদি শুনে যে আমার বর আমার আপন বোনের সাথে শারীরিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিল তখন তো আমারই লজ্জা হবে?আর আমি কী করেই বা মুখ দেখাবো ওদের!
তাই আমি চুপচাপ ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়ে ইচ্ছে মতো কেঁদেছি। কাঁদতে কাঁদতে ভেবেছি, আসলেই কী পৃথিবীতে ভালোবাসা বলতে কিছু আছে? যদি থাকতো তবে নাঈম কী করে আমায় ঠকালো?
অনেক্ষণ ধরে ওয়াশরুমে আমি। কাঁদতে কাঁদতে এখন আমার পেটে কেমন ব্যাথা করছে। এখন আর কাঁদতে পারছি না। কাঁদলেই মনে হচ্ছে এই বুঝি পেট ছিঁড়ে যাবে আমার।
কাঁদছি আর ভাবছি পৃথুর কথা। আমার মা মারা যাওয়ার সময় আমি ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি।আর পৃথু ক্লাস সিক্সে। আমাদের দু বোনকে নিয়ে আব্বা তখন অকূল পাথারে পড়লেন। কীভাবে কী করবেন! কিন্তু ভাগ্য ভালো যে আমার শাশুড়ির এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় আমার শাশুড়িকে বললেন, নিজের ছেলের জন্য তো বউ খুঁজতেছো। আমি তোমাকে একটা লক্ষ্মী বউয়ের খুঁজ দিতে পারি। কিন্তু কথা হলো মেয়ের মা নাই।আর ওরা গরীব।’
আমার শাশুড়ি বললেন,’আমি একটা লক্ষ্মী বউমা চায় আর কিছু না।’
তারপর নাইম এলো।তার মা এলেন আমায় দেখতে।দেখে আর কোন কথা নাই সেদিনই আমায় তিনি নিয়ে গেলেন।আর বললেন পৃথুকেও তিনি নিয়ে যাবেন সাথে।সে তার মেয়ের মতোই ওখানে থাকবে। আব্বাকেও বলেছিলেন। কিন্তু আব্বা আগে থেকেই একটু সাদু দরবেশদের মতো ছিলেন। তিনি এই সুযোগে এইসবে ঝুঁকে আজ পর্যন্ত বাড়ি ফিরলেন না।
নিতু এখন ক্লাস নাইনে পড়ে। কিন্তু বয়স তো ওর কাঁচা। এই বয়সে মানুষের চোখে রঙিন চশমা থাকে।যাই দেখে তাই ভালো লাগে।আর আবেগও কাজ করে বেশি।তাই বলে কী নিজের আপন বড় বোনের বরের সাথে এসব!
ছিঃ ছিঃ ছিঃ!
‘
আমার শাশুড়ি এসে দরজায় শব্দ করে ডাকছেন আমায়।
‘বউমা,ও বউমা, এতোক্ষণ হইছে বাথরুমে গেলা বাইর হওনা কেন?’
তিনি হয়তো ভাবছেন আমি কী ওখানে গিয়ে পড়ে টরেই গেলাম নাকি!
আমার কান্না তখনও থামছে না। তবুও খুব সাবধানে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে দরজা খুলে বের হলাম। আমার শাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে তখন বললেন,’তুমি কানছো বউমা?’
আমি চাপা গলায় বললাম,’না আম্মা। কাঁদবো কেন আমি?’
‘না তুমি কাঁনছোই। তোমার চোউক্ষে টাউর দিতাছে। কিসের লাইগা কানছো কও?’
‘না আম্মা।কাঁদিনাই আমি। চোখে বেশি করে পানি দিছি তো তাই চোখ লাল হয়ে গেছে।’
‘চোখ না পানির কারণে লাল হইছে কিন্তুক গলা। গলার শব্দ তোমার ভিজা কেরে গো বউমা?’
আমি তখন প্রায় ধরা খেয়ে গেছি আমার শাশুড়ির কাছে। কিন্তু এই কথাটা কোন ভাবেই তার কাছে প্রকাশ করা যাবে না।শুনলে তিনি ভীষণ কষ্ট পাবেন। তাছাড়া আমার আপন বোন সম্পর্কে এমন একটা কথা কী করে বলি আমার শাশুড়ির কাছে!
আমি তাই বানিয়ে একটা কথা বললাম।
বললাম,’আম্মা, আমার মার কথা হঠাৎ মনে হয়ে গেছে। আমার মা তো সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা গিয়েছিলেন। এই জন্য আমার ভয় হইতেছে যদি আমিও—।’
কথাটা শেষ করতে পারলাম না আমি।এর আগেই আমার শাশুড়ি আমার মুখ চেপে ধরে বললেন,’চুউপ করো।এইরম অলক্ষি কথাবার্তা আর কোনদিন কইবানা কইলাম! আমার নিজের কোন মেয়ে সন্তান নাই। বিয়ার পর থাইকা তোমারেই আমি নিজের মেয়ের মতন দেইখা আসতাছি। ভালো বাসতাছি। এই তোমারে ছাড়া আমি বাঁচবাম কেমনে গো মা?’
কথাটা বলে আমার শাশুড়ি কেঁদে উঠলেন হাউমাউ করে।
আমি বললাম,’আম্মা থামেন। প্লিজ থামেন। আমি আর কোনদিন এমন কথা বলবো না। কোনদিন না।’
আমার শাশুড়ি তখন আমায় জড়িয়ে ধরে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,’তাই যেন হয়।’
‘
পৃথু আজ সারাদিন আমার থেকে আড়ালে আড়ালে থেকেছে। কিন্তু সন্ধ্যা বেলায় হঠাৎ করে সে আমার কাছে এসে—-
‘
#চলবে